শহরে অসহনীয় যানজটে অতিষ্ঠ নাগরিক জীবন

কক্সবাজারে অবৈধ ৬টি স্থান থেকে ট্রাফিক পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায়!

সাইফুল ইসলাম •

গতকাল শহরের প্রধান সড়ক পানবাজার রোড পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে তোলা।

এটি পর্যটন নগরীর চিত্র। কক্সবাজার শহরের তীব্র যানজট কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। ফলে চরম দূভোর্গের শিকার হচ্ছে স্থানীয় ও দেশি-বিদেশী পর্যটকেরা। যানজটমুক্ত শহর করতে ট্রাফিক পুলিশ ও পৌরসভার প্রতি দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

বিশেষ করে যানটজের কারণ হলো শহরের বাজার ঘাটা থেকে লালদিঘীর পাড় পর্যন্ত প্রায় ৬ টির অধিক স্থানে অবৈধভাবে সড়ক ও ফুতপাটের উপর পার্কিং করে সিএনজি ও টমটম। ওই স্থানগুলো হলো বাজারঘাটা সড়কের উপর, পেট্রোল পাম্পের সামনে, বিলকিস মার্কেটের সামনে, লালদীঘির পাড় মসজিদের সামনে, সোনালী ব্যাংকের সামনে এবং পৌরসভার উত্তর পাশের্ব সড়কের উপর। অভিযোগ উঠেছে এসব অবৈধ সিএনজি স্টেশন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছে একটি সিন্ডিকেট। এছাড়াও য়ে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় তারা আবারও আশপাশের চায়ের দোকানে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই শহরে যানজট লেগেই থাকে। অবৈধভাবে যত্রতত্র সিএনজি ও টমটম পার্কিং, প্রধান সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান, দিনের বেলায় বড় বড় মালবাহী গাড়ি প্রবেশসহ সবমিলিয়ে প্রধান সড়কের দুই পাশের্ব বাস-ট্রাক দঁাড়িয়ে থাকার কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ীভাবে রুপ নিয়েছে। প্রত্যহ দিনের প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় যানজটের কারণে থমকে থাকে জনজীবন। এতে কক্সবাজারের উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

সরেজমিনে আরো জানা যায়, শহরের অভ্যন্তরে প্রায় ছয়টি স্থানে বেশির ভাগ যানজট লেগে। তৎমধ্যে বার্মিজ মার্কেট বৌদ্ধমন্দির সড়কের চৌরাস্তার মোড়ে, বাজারঘাটা আইবিপি রাস্তার মাথায়, পেট্রোল পাম্পের পাশে, খুরুশকুল রাস্তার মাথায়, পৌরসভার সামনে প্রধান সড়কে।

এদিকে কক্সবাজারে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও যে কয়েকজন আছে তারাও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গাড়ি তল্লাশীর নামে অন্য ধান্ধায় ব্যন্ত থাকে- এ অভিমত সচতেন মহলের।
শহরের পিটিস্কুল থেকে টমটম যোগে বাজারঘাটা আসতে যেখানে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ মিনিট, সেখানে যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১ ঘন্টারও বেশি সময় পার করছে বলে জানান যাত্রীরা। যাত্রীরা আরো জানান, ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলে শহরকে যানজটমুক্ত করতে পারেন। কিন্তু এরা প্রতিনিয়তেই যানজট নিরসনের চেয়ে সিএনজি, টমটম, মোটরসাইকেল ও অনুমোদনহীন গাড়ি থেকে টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকেন।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ঝিলংজার বাসিন্দা মো. আব্দুস সালাম বলেন, এ কক্সবাজার শহর নাকি পর্যটন এলাকা। এখানে রাস্তার কোন নিয়মনীতি নেই। দিন দিন সড়কে যানজট বাড়তেই দেখা গেছে। এ যানজটের কবলে পড়ে বার্মিজ মার্কেট থেকে হাসপাতালে আসতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগছে।

শহরের পিটিস্কুল এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে ব্যাংকার বলেন, “সরকারী বন্ধ ছাড়া রুমালিয়ারছড়া থেকে প্রতিদিন আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়। যে ব্যাংকে যেতে ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা পূর্বে বাসা থেকে বের হতে হয়। তা না হলে ঠিক মতো একদিনও ব্যাংকে উপস্থিত হতে পারিনা”।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক দম্পতি জানান, যে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় তারা আবার আশপাশের চায়ের দোকানে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। সড়কে এতো যানজটের মাঝেও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের কোন মাথা ব্যথা না থাকাটা খুবই দু:খজনক। এভাবে কখনো বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হয়ে উঠবেনা কক্সবাজার।

মনিরুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী জানান, যানজটতো মানুষের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে রয়েছে। এ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন কর্মজীবন থেকে ২ থেকে ৩ ঘন্টা অপচয় হচ্ছে। তিনি বলেন, “পেশাগত কাজে আদালতে যেতে অর্ধ ঘন্টা সময়ের জায়গায় এখন লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। অসহনীয় যানজটের কারনে অনেক সময় কর্মস্থলে উপস্থিতও হতে পারিনি”।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায় “ এখন যাঁরা কক্সবাজারে এসেছেন তাঁরা সবাই নতুন। এদিকে পর্যটন নগরী হিসেবে চাহিদা অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় মাঝে মধ্যে একটু যানজট হয়ে থাকে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে আসছি যানজটমুক্ত রাখার”।